ভদ্রলোক স্কুল লেভেলে ভালো হকি খেলতেন। দুন স্কুলের হকি টিমের এই দুর্দান্ত গোলকিপারটি গোল হয়তো করেন নি কিন্তু নিশ্চিত গোল অনেক বাঁচিয়েছেন। ভারতীয় হকি টিমের পিছনে দাঁড়িয়ে, নিঃশব্দে সেই ভদ্রলোকই আরেকবার ভারতীয় হকিকে নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন। ৭৪ বছরের বৃদ্ধ, দুন স্কুলের প্রাক্তন গোলকিপারটির নাম নবীন পাটনায়েক। হ্যাঁ, ঊড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পাটনায়েক। ‎২০১৭-র পরে ভারতীয় হকি স্পন্সরশিপের অভাবে ধুঁকছিল। ততদিনে ভারতীয় হকির “মৃত্যু” ঘোষণা হয়ে গেছে তাই স্পনসররা সবাই ক্রিকেটের পিছনে ছুটছে। সেই দুর্দিনে এগিয়ে এসেছিলেন একমাত্র নবীন পাটনায়েক। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি ঘোষণা করে দেন পরবর্তী ৫ বছরে ভারতীয় মেন্স এবং ওমেন্স হকি টিমের সব খরচ বহন করবে ঊড়িষ্যা সরকার। এছাড়া ১৫০ কোটি টাকা খরচ করা হবে হকির ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের জন্য। ‎এক সাংবাদিক সে ঘোষণা শুনে প্রশ্ন করেছিলেন ঊড়িষ্যার মতো গরিব রাজ্যর পক্ষে এই বিপুল খরচ একটু বাড়াবাড়ি নয় ? তাও আবার হকির মতো একটি “মৃতপ্রায়” খেলায় ! নবীনবাবু উত্তরে বলেছিলেন “আমি তো হকিতে ইনভেস্ট করছি না। আমার ইনভেস্টমেন্ট ভারতীয় ক্রীড়া প্রেমী যুবক-যুবতীদের ভবিষ্যতে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা আমাকে হতাশ করবেন না।” ‎হতাশ করেননি মনজীৎ সিং, রানী রামপালরা। হতাশ করেননি ঊড়িষ্যার ছেলে মেয়েরাও। অলিম্পিকে সাড়া ফেলে দেয়া ভারতীয় হকির পুরুষ এবং মহিলা দলের ভাইস ক্যাপ্টেন, দুজনেই ঊড়িষ্যার – বীরেন্দ্র লাকরা এবং সবিতা পুনিয়া। ‎শুধু ১৫০ কোটি টাকা ইনভেস্ট করেই থেমে যাননি নবীন পাটনায়েক। নিজের উদ্যোগে আরো ১০০ কোটি টাকার স্পনসরশিপ জোগাড় করে এনেছেন। রাউরকেল্লায় ২০,০০০ দর্শকের জন্য হকির একমাত্র স্টেডিয়ামটি তৈরী করছেন। টাটা গ্রুপের সঙ্গে কোলাবোরেশনে ভুবনেশ্বরে বানিয়েছেন ভারতে হকির একমাত্র হাই পারফরমেন্স সেন্টারটি। কলিঙ্গ হকি কমপ্লেক্সে ২০০ সেরা হকি প্রতিভা এবং সারা দেশে ২৫০০ উঠতি হকি খেলোয়াড়ের ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছে ঊড়িষ্যা সরকার। ২০১৮-র হকির ওয়ার্ল্ড কাপ, ২০১৪-র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হয়েছিল ঊড়িষ্যায়। ২০২৩-এর হকি ওয়ার্ল্ড কাপও হবে ঊড়িষ্যায়।‎অলিম্পিকে তিন বারের সোনা জয়ী পাকিস্তান হকি টিমের এখন করুন অবস্থা। তারা অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারে না। পাকিস্তানের সোনা জয়ী এক প্রাক্তন হকি প্লেয়ার গতকাল দুঃখ করে বলেছেন “আমাদের দেশে যদি একজন নবীন পাটনায়েক থাকতেন !” ‎ভাগ্যিস আমাদের একজন নবীন পাটনায়েক আছেন। আর ভাগ্যিস তিনি ছোটবেলায় হকি খেলতেন – ক্রিকেট নয় ! ভারতীয় হকির পুনর্জাগরণের “কবীর খান” তিনিই। আমাদের ফোর্থ পজিশন, ব্রোঞ্জ মেডেল গুলো হয়তো আরেকটু ঘষলেই সোনা, রুপো হয়ে যাবে !‎চাক দে, ইন্ডিয়া ! 🇮🇳🇮🇳 —- © আশাভরী সেন।

Published by moon DJ studio

https://wbsfda.org/

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started