ঝাড়গ্রাম-বেলপাহাড়ী (পর্ব-২)সন্দীপ পাল মধ্যাহ্নভোজ সেরে রওনা দিলাম ঘাগড়া জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে। বেলপাহাড়ী বাজার এলাকা থেকে ফলসটির দূরত্ব মাত্র ৫-৬ কিমি। সরু পিচ-রাস্তা একজায়গায় লালমাটির কাঁচারাস্তা হয়ে নিচের দিকে নেমে গেছে। খানিক দূরে সামনে দেখা যাচ্ছে একটি ছোট নদী, সমতলে স্থানীয় লোকজন স্নান করছে, কয়েকটা মোষ গা ডুবিয়ে বসে আছে। আর বাঁদিকের জমিটা পাথুরে – ঐদিকেই ঘাগড়া ফলস। ওই ঢালু জমিতে একটি গাছের নিচে গাড়ি পার্ক করে হাঁটতে শুরু করলাম। ওই ছোট নদীটির নাম তারাফেনি। সারাবছর তেমন জল না থাকলেও বর্ষাকালে জলের স্রোত থাকে তীব্র। নদীখাতে শক্ত পাথরের গায়ে গোল গোল বাটির মতো গর্তই তার প্রমান। হলদেটে ঘোলাটে জল বয়ে চলেছে নদীখাতে। এই তারাফেনি নদীই একজায়গায় তৈরী করেছে ঘাগড়া জলপ্রপাত। খুব বেশি উঁচু বা বড় নয় ফলসটি, তবে আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে বৈকি। ঠিকই করে রেখেছিলাম এখানে স্নান করব, তাই সাথে গামছা, জামাকাপড় নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ওপরের দিকে পাথুরে নদীখাতে পা ডুবিয়ে দেখি, সেখানে দাঁড়ানো অসম্ভব, এতটাই জলের স্রোত। তাই খানিকটা নিচের দিকে নেমে এসে স্নান করলাম। নদীর জল বেশ ঠান্ডা, তার মধ্যে ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হল – সবমিলিয়ে ঘাগড়ায় স্নান করার অভিজ্ঞতাটা ছিল অনবদ্য। স্নান করে ঘাগড়াকে বিদায় জানিয়ে চললাম কাছেই খাঁদারানী বা খান্দারানী জলাধার দেখতে। ঘাগড়া থেকে খাঁদারানীর দূরত্ব ১৪ কিমি। মসৃন ৫ নং রাজ্য সড়ক থেকে একজায়গায় বাঁদিকে লালমাটির কাঁচারাস্তায় ঢুকতে হয় (ভিডিওতে দেখুন)। গ্রামের মধ্য দিয়ে সরু রাস্তা। বর্ষায় কিছুকিছু জায়গায় রাস্তার বেহাল অবস্থা। যাইহোক, বিকেল ৪টে নাগাদ জলাধারের সামনে পৌঁছলাম। খুব সুন্দর জায়গাটি। একপাশে বাঁধের ওপর ঢালাই ব্রীজ, দূরে সবুজ পাহাড়, আর মাঝে পরিষ্কার লেকের জলে ঠান্ডা হাওয়া খেলা করছে। কিছু সময় কাটিয়ে গাড়ীতে উঠলাম।দিনের শেষ গন্তব্যে পৌঁছতে এবার বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। এবার আমি যাচ্ছি বাঁকুড়ার ঝিলিমিলি হয়ে তালবেড়িয়া জলাধার দেখতে, খাঁদারানী থেকে যার দূরত্ব ২৭ কিমি। ওই ৫ নং রাজ্য সড়ক ধরেই চলেছি, রাস্তা মাখনের মতো মসৃন, আর দুপাশের সবুজ যেন ক্লান্ত হতেই দিচ্ছেনা। পথে একজায়গায় স্থানীয় দোকান থেকে গরম গরম সিঙ্গারা কিনলাম – তার স্বাদ ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা। তালবাড়িয়া যখন পৌঁছলাম ঘড়িতে ৫:১৫ বাজে। পড়ন্ত বিকেলের আলোয় ঝলমল করছে জলাধারের চারিদিক। চারিদিক নিস্তব্ধ, আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। দূরে ঘন সবুজ পাহাড়ি ভূমিরূপ, নীল আকাশে মেঘের আনাগোনা জায়গাটাকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। অবশেষে বাড়ী ফেরার পালা। ঝিলিমিলি-রানীবাঁধ রোড ধরে গাড়ী এগিয়ে চলেছে। এই রাস্তাটির সৌন্দর্য্যও অসাধারণ। দুপাশে ঘন জঙ্গল, মাঝখান দিয়ে চলে গেছে কালো পিচরাস্তা। জানতাম সুতান ফরেস্ট খুব কাছেই, কিন্তু আজ আর হাতে সময় নেই। আবার আসা যাবে অন্য কোনো সময়ে। ফেরার সময় বাঁকুড়ার কোনো এক গ্রাম থেকে যে সূর্যাস্ত দেখলাম, বহুদিন মনে থাকবে। এরপর বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর-আরামবাগ হয়ে যখন বাড়ীতে ফিরলাম, রাত ১১টা বাজে।ভিডিও লিঙ্ক: https://youtu.be/Ts2t0UQQeg0খরচ: আমার গাড়ী মোটামুটি গড়ে প্রতি লিটারে ১৬ কিমি সার্ভিস দেয়। সেটা ধরে হিসেবে করলে ৫৩০ কিমিতে পেট্রল লেগেছে ৩৩ লিটার মতো, যাকে ১০২ টাকা (প্রতি লিটার পেট্রল মূল্য) দিয়ে গুন করলে দাড়ায় ৩,৩৭৮ টাকা। টোল চার্জ সবমিলিয়ে ২৪৫ টাকা। দুজনের মধ্যাহ্নভোজে খরচ হয়েছে ৩৩৫ টাকা। আর কনকদূর্গা মন্দিরে গাড়ী পার্কিং ফী ৫০ টাকা ও প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ৫ টাকা। ব্যাস এটুকুই সর্বসাকুল্যে খরচ।পুনশ্চ: যারা কোথাও না থেকে দিনের-দিন কাছে-পিঠে ঘুরে আসতে চান, শুধুমাত্র তাদের সুবিধার জন্যই এই তথ্যবহুল পোস্ট। পছন্দ না হলে, পোস্টটি উপেক্ষা করে এগিয়ে যান, অবান্তর মন্তব্য করে নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দেবেন না। যেহেতু আমি গাড়ীতেই গোটা ট্রিপটা করেছি, তাই ট্রেনে কিভাবে জায়গাগুলিতে পৌঁছতে হয়, নিকটতম স্টেশন, থাকার জায়গার সন্ধান – এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার জানা নেই।ভিডিও লিঙ্ক: https://youtu.be/Ts2t0UQQeg0 প্রথম পর্বের লিঙ্ক: https://www.facebook.com/groups/207766536438011/posts/938591666688824

Published by moon DJ studio

https://wbsfda.org/

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started