শীতের দুপুরে দুই বন্ধু বাইক চালিয়ে বেড়াতে বেড়িয়ে পরেছি গন্তব্য হীন ভাবে। শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার যেতেই একটি লাল মোরাম বিছানো রাস্তা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো, আমিও মনে মনে গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ..গাইতে গাইতে এগিয়ে চললাম। গ্রামের মনোরম পরিবেশে ঘুরতে বেশ ভালোই লাগছিল। কিন্তু এইভাবে ঘুরতে গিয়ে কখন যে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে বুঝতে পারিনি বুঝতে পারি বাঁশ বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করার সময়। এখানে এসে শেষ বিকালের আলোতেও কেমন অন্ধকার ঘনিয়ে আসে আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার আওয়াজ কেমন যেন রহস্যময় করে তোলে জায়গাটাকে।বাঁশ বাগান পার করে আবার খোলা মাঠের ভেতর এসে পারলাম কিছু সময় পরে, এবার কিছুটা গোধূলি আলোর দেখাও পেয়ে গেলাম। সামনের ঘন্টার আওয়াজ পেয়ে সেইদিকে এগিয়ে যাই। দেখি বেশ কিছু জমিদারি আমলের মতো বাড়ি রয়েছে যেগুলো বেশ পুরনো এবং সেগুলির গায়ে বনেদিয়ানার ছাপ স্পষ্ট। পুকুর পাড়ে বিশাল বট গাছ তার নিচে কালীমন্দির, সেইখানেই ঘন্টা বাজিয়ে পূজা চলছে। মন্দির আর ঠাকুর দেখতে দেখতে আমার চোখ আটকে গেলো একটি খাঁচার দিকে । খাঁচাটি লোহার মোটা রড দিয়ে বেশ শক্ত করে বানানো যদিও রং করা হয়েছে বর্তমান সময়েই।খাঁচার ভিতর একটি মাটির তৈরী ছাগল আর বাঘ ,দেখে মনে মনে কিছু ভাবছি আনমনে । পিছন দিক থেকে কেউ বলে উঠলো কি দেখছো হে? আমি ফিরে দেখি এক বৃদ্ধ ধুতি আর ফতুয়া পরিহিত , বয়স আনুমানিক পঁচাত্তর ছিয়াত্তরের মতো। সামনে এগিয়ে বললাম না এই আর কি দেখছিলাম একটু। এরপর উনি যা বললেন তার থেকে জানতে পারলাম এই অঞ্চলে এক সময়ে সত্তর বছর আগেও খুবই বাঘের উপদ্রব ছিলো। এই বাঘের আকার মাঝারি ধরনের আর সুযোগ পেলে রাস্তায় একা মানুষের উপর আক্রমণ করতো হামেশাই। তাই সরকার থেকে এই খাঁচায় ছাগলের টোপ দিয়ে বাঘ ধরা হতো। সেই খাঁচা ঐতিহ্য রূপে এখনো এখানে রাখা আছে আজো। মনে মনে ওই সময়ের কথা চিন্তা করে ভাবতে থাকি এখনও বাঁশ বাগানের রাস্তা যদি এমন থাকে তবে সেই সময়ে কি ছিলো । অন্ধকার ঘনিয়ে আসে আমরা দুই বন্ধু বাইকের আলোর উজ্জ্বলতায় রাস্তা দেখে বাড়ির পথে এগিয়ে চলি আর ভাবি। এই কয়েক বছরেই আমরা আমাদের কাছের প্রকৃতি থেকে বাঘ কেনো আরো কতো জীবকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি এবার আমরা হারিয়ে যাব না তো।