বাংলার প্রাচীনতম সেতুর গৌরবের অধিকারী ছিল অবিভক্ত মেদিনীপুর। আর সেই সেতুটি ছিল নারায়নগড় ব্লকের পোক্তাপুলে কেলেঘাই নদীর উপর। প্রাচীন এই সেতুটি হিন্দু স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত ঝামাপাথর দিয়ে লহড়া-ধাপ পদ্ধতিতে তৈরী হয়েছিল। পাশাপাশি দুটি সেতু। প্রত্নতাত্ত্বিক তারাপদ সাঁতরা মহাশয়ের মতানুসারে ওড়িশার গঙ্গ রাজবংশীয়রা দ্বাদশ-ত্রিয়োদশ শতক সময়কালে মেদিনীপুরের অনেকাংশ পর্যন্ত রাজত্ব বিস্তার করেছিলেন। তাদের আমলেই এই সেতুটি নির্মাণ হয়। কেননা বাংলা থেকে পুরী তথা দক্ষিন ভারত যাতায়াতের প্রধান রাস্তা এটাই ছিল। পরবর্তী সময় O.T Road নামে পরিচিত হয়। শুধু এটাই নয় সেই সময়কালে এই ধাপ পদ্ধতিতে তৈরী পুরীর পাশে মধুপুর নদী উপর আঠারো নালা সেতু ও জাজপুরে এগারো নালা সেতুও।যাইহোক তৎকালীন ওড়িয়া হিন্দু স্থাপত্য রীতি মেনে নির্মিত হয়েছিল। এই সেতু বা পোলোর গায়ে একটি মূর্তি খোদাই ছিল। স্থানীয় ভাবে নাম মল্লিকা। লোককথা ও লোকবিশ্বাস রয়েছে এই মল্লিকাকে নিয়ে। তাই এই সেতুকে অনেকে #মল্লিকা_বুড়ির_পোল বলেন।মূর্তি পুজারী গোবিন্দ উত্থাসিনী কথায়_ “অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফেরার সময় জল তেষ্টা পেলে কেলেঘাই নদীতে নেমে হারিয়ে যান। পরে বাবা স্বপাদিষ্ট হন। সেই থেকে বাবার সঙ্গে ফেরা মেয়ে মল্লিকার মূর্তী বসানো হয়।লোকবিশ্বাস আছে নিঃসন্তান মহিলারা এই পোলের নীচে পরিক্রম করে মল্লিকা দেবীর পূজো দিলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এখনও প্রত্যেক পয়লা বৈশাখে কেলেঘাই সংলগ্ন পোক্তাপুলে মেলা বসে।দূর-দূরান্তের ভক্ত সমাগম হয়।কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির স্বাভাবিক নিয়মে এই প্রাচীন নিদর্শন টি আর নেই। এখন NH-60 কতৃপক্ষের আধুনিক লম্বা কংক্রিট ব্রিজ। তবে মল্লিকা দেবীর মূর্তী আজও বর্তমান, পরিবর্তিত হয়েছে কংক্রিটে। হারিয়েছে শুধু প্রাচীন পোলটি কিন্তু দৈবী পরম্পরা রক্ষিত আছে।কৃতজ্ঞ স্বীকার_ Biswasindhu Dey Biswasindhu Dey