gghc21একা ঝুঁকে পরা লোকটা হেঁটে যায় ধীর পায়ে, শরীরে সর্বত্র সময় চিহ্ন রেখে গেছে, শুধু চোখ আজও সেইরকম জ্বলজ্বলে। কতদিন হলো ছবি তোলা ছেড়েছে, কতদিন হলো বেড়াতে যাওয়া ছেড়েছে।সেই মনে পড়ে কত যুগ আগে মা কাঁচা হলুদ বেটে মধু দিয়ে খাওয়া তো, সেই কবে গায়ে হলুদ ঘষতে ঘষতে বলতো একদিন তোর বিয়ে হবে আর আমি এইভাবে হলুদ ঘষে স্নান করাবো। সেই লোকটার 4 বছর চিৎকার করে বলতো “না আমি বিয়ে করবো না, আমি শ্বশুর বাড়ি যাবো না”। বিয়ে, বিয়ে কি সবার হয়? কিন্তু ভালোবাসার হলুদ রং মনে লাগেই, কারো তা বিয়ের পর হালকা হতে হতে হারিয়ে যায়, আর কেউ সারাজীবন সেই রং কে ঝড় জল বৃষ্টি থেকে আগলে রাখে। মায়ের এইটুকু স্মৃতিই রয়ে গেছে, মুখ কবেই হারিয়ে গেছে। গন্ধ আর রং পিঠে করে স্মৃতির বস্তা নিয়ে আসে, এক লহমায় হারিয়ে যায় বর্তমান। মা কে যেদিন স্বশানে নিয়ে যাওয়া হয় সেদিন ও ছিল মায়ের পরণে হলুদ শাড়ি। সেদিন বাড়ির সামনে সূর্য্যমুখী ফুটেছিল প্রচুর, সেদিন আকাশ কালো করে বৃষ্টি এসেছিল, সেই ছেলেটার চোখেও নেমেছিল বান। সব ঘটনা গুলো ঘটে গেছিলো সিনেমার মতো, কিন্তু যখন সবাই চলে গেল, বিকেল থেকে সন্ধ্যে নেমে এলো, তখন গুটি গুটি পায়ে বাস্তব হানা দিলো।, আর তখন চোখে নামলো জল। বাবা তো কোনোকালেই ছিল না।তারপর একা চলতে শেখা, ঠিক যেরকম cycle চালানো শেখা ঠিক সেইরকম। অনেকগুলো বছর পর একদিন হঠাৎ ছেলেটা জড়িয়ে ধরলো ক্যামেরা কে, প্রথম খুঁজে পেলো যা দেখছে সব মানুষ কে দেখাবার সুযোগ। নিজের জীবনে ডুব দিয়ে থাকা ছেলেটার যেমন ছিল না কথা, ঠিক সেরকম ছিল না খুব একটা বন্ধুও। তাই কিভাবে যেন ক্যামেরা বন্ধু হলো আর গ্রাম হলো খেলার মাঠ।এইভাবে কত গ্রাম কত বর্ষা, শীতের পড়ে একদিন প্রেম এলো। আদিবাসী নাচের ছবি তুলতে গেছিলো ছেলেটা। এক ঝাঁক হলুদ শাড়ি পড়া মেয়ে এসেছিল নাচতে। বারবার ক্যামেরা ঘুরে যাচ্ছিল একজনের দিকেই, নিকষ কালো মুখ, অথচ গভীর এক চোখ। নাচের শেষে এক ঝাঁক হলুদ পাখি ছুটে এসেছিল তার কাছে ছবি দেখতে। এভাবেই পেয়ে গেছিল সেই কালো হরিণীর ঘরের ঠিকানা। তারপর কত কথা এই মুখ চোরা ছেলেটা বলেছিল, কত হলুদ বসন্ত পেরিয়ে গেলো। হলুদ মাখার দিন কিন্তু এলো না, কেন যে হলোনা সেও ঠিক জানা নেই। ছেলেটার বন্ধনে যাওয়ার অনিচ্ছা আর মেয়েটার বন্ধনে যাওয়ার ইচ্ছাই হয়তো ভেঙে দিলো সব। তারপরে ছেলেটা যতবার ছবি তুলতে গিয়ে হলুদ রং দেখে যতবার বসন্তে হলুদ পলাশ ফুটে ওঠে, যতবার দোলে হলুদ রং ছড়িয়ে পড়ে ততবার ছেলেটার চোখে দুই নারী ভেসে ওঠে। এখন সে আর ছেলে নয়, বয়েস হয়েছে, বেদনা এখন দর্শন, এখন ধীরে ছেলেটা হেঁটে চলে যায়। পিছনে হেঁটে যায় হলুদ শাড়ি পড়া তার মা আরো কিছু পিছনে হেঁটে যায় তার সেই কালো ভালোবাসা যার পরণেও হলুদ শাড়ি। যেদিন দড়ি থেকে তার দেহ নামানো হয়েছিল সেই হলুদ শাড়িটাই পড়েছিলো, যে শাড়িতে প্রথম দেখা। এভাবেই বেদনার রং হয়ে যায় হলুদ, এভাবেই ভালোবাসার রং হয়ে যায় হলুদ। বাকি সব রং শুধুই ধূসর।অনিন্দ্য ফণী

Published by moon DJ studio

https://wbsfda.org/

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started