#পোখরি_লেক_জয়ন্তী_ডুয়ার্স#Solo_Hikingনিজে একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হবার সুবাদে ডুয়ার্সের আনাচেঁ কানাচেঁ বেশ কিছু বারই ঘোরা হয়েছে। এবারের গন্তব্য ছিল জয়ন্তী, ডুয়ার্স। জয়ন্তী বক্সা টাইগার রিজার্ভের মধ্যে অবস্থান করে। আমি জয়ন্তী পৌঁছে জয়ন্তী রিভার বেডের সামনে একটি হোটেল বেছে নিয়ে সেখানে গেঁড়ে বসলাম। এবারের উদ্দেশ্য হল পায়ে হেটে জয়ন্তীর আশে পাশে ঘুরে দেখা। জয়ন্তী যাওয়ার আগেই সেখানকার ব্যাপারে কিছু পড়াশোনা এবং জয়ন্তী পৌঁছে সেখানের লোকাল মানুষদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে পোখরি লেকের ব্যাপারে এক স্বচ্ছ ধারনা পাওয়া গেল। পোখরি লেকটি বক্সা টাইগার রিজার্ভের জয়ন্তী রেঞ্জের মধ্যে পোখরি হিলে অবস্থান করেছে। এই লেকের উচ্চতা 1100 মিটার। জয়ন্তী মোড় থেকে এর দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিমি। এই পাঁচ কিমি পথের প্রথম কিছুটা জিপে করে এবং শেষ পথ টুকু পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে হয়। সাথে গাইড থাকা বাধ্যতামূলক। তবে আমার পরিকল্পনা ছিল এই পুরো পাঁচ কিমি পথ হেঁটে যাওয়ার। জঙ্গলে প্রতি বারই জিপে চেপে গিয়েছি। জিপের কর্কশ শব্দে জঙ্গলের নিস্তব্ধতা কিছুতেই অনুভব করা যায়না। এবারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গলকে খুব কাছ থেকে দেখা, জঙ্গলের শান্ত স্নিগ্ধ নিস্তব্ধতাকে প্রান ভরে উপভোগ করা। আমি সেখানের লোকাল মানুষদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম কাঠ সংগ্রহ করা বা আরো বিভিন্ন কাজে জন্য তাদের জঙ্গলে যাবার অনুমতি আছে। সেখান থেকেই আমি একজনকে পেয়ে গেলাম যে আমায় জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পোখরি লেকে নিয়ে যাবে। পরের দিন খুব ভোরেই আগের দিনের ঠিক করে রাখা গাইড দাদা আমার হোটেলে চলে এলো। আমরা দুজন গ্রামের মধ্য দিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করলাম। তখনো ভোরের আলো সম্পূর্ণ রূপে ফোটেনি। আধো অন্ধকার জঙ্গলের পথে, গাছের পড়ে থাকা শুকনো পাতার উপর দিয়ে মড় মড় ধ্বনি তুলে আমরা হেটে চলেছি লেকের উদ্দেশ্যে। মনের মধ্যে অদ্ভুত এক ভালো লাগার আতঙ্ক রয়েছে। মনে হচ্ছে এই বুছি ঝোপের মধ্যে থেকে বাঘ বেরিয়ে ঘাড়ের উপর লাফিয়ে পড়বে। বাঘ তো বেরোলো না কিন্তু হঠাৎ আমাদের থেকে 25-30 হাত দূরে পথের পাশের ঝোপ থেকে একটি ছোট্ট হরিন বেরিয়ে পথের মাঝে এসে দাড়ালো। হরিনটি আমাদের দিকে এবং আমরা হরিনের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম। দুজন দুজনকে দেখেই বেশ অবাক। সে হঠাৎ করে যেমন পথের উপর এসে দাড়িয়েছিল, পরক্ষণেই আবার এক লাফে ঝোপের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল। বনের মধ্যে থেকে ভেসে এলো তার ডাক। বনের মধ্য থেকে ময়ূর, নানান পাখির কিচির মিচিরের সাথে আরো নানান জীবজন্তুর ডাক ভেসে আসছে। একটি মোড় ঘুরতেই দেখতে পেলাম দুটি বন মোরগ পথের উপর থেকে কিছু খুটে খুটে খাচ্ছে। আরো কিছুটা এগোতেই চোখে পড়লো বনের মধ্যে ময়ূরেরা খেলা করে বেড়াচ্ছে। এই ভাবে জঙ্গলের শীতল হাওয়া আর স্নিগ্ধ পরিবেশ উপভোগ করতে করতে এগিয়ে চলছিলাম। জঙ্গলের পরিবেশ এতো শান্ত যে আমি নিজেই নিশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত শুনতে পারছিলাম। ঠিক সেই সময় কোনো এক গাছের ডাল থেকে একটি হর্নবিল বিকট শুরে ডেকে উঠলো। আর আমি বাঘ ভেবে লাফিয়ে উঠে দু পাঁ পিছিয়ে গেলাম। আমার গাইড দাদা হেসে উঠে আমায় জানালো যে সেটি হর্নবিলের ডাক। বনের মধ্যে স্থানে স্থানে অন্য পশু এবং বিশেষ করে বুনো হাতির চলাফেরা করার চিহ্ন চোখে পড়ছিল। এতক্ষন পথ প্রায় সমতল ছিল। জিপে করে এলে এই পর্যন্তই জিপ আসে। এখান থেকে পথ কিছুটা খাড়াই আর পাথুরে। এই স্থানটি কিছুটা উচু বলে বনের অনেক দূর পর্যন্ত চোখ যায়। এই চড়াই পথ পার করে পোখরি হিলে অবস্থিত পোখরি লেকে এসে পৌঁছলাম। লেকটি বেশ বড়ো। এই লেকের জল কখনোই শুকোয়না। বনের বিভিন্ন পশু পাখি এখানেই জল পান করতে আসে। এই পোখরি লেকে অনেক বড়ো বড়ো মাগুর মাছ আর কচ্ছপ দেখা যায়। লেকের পাশে ঠাকুরের বেদি বানানো আছে। বছরে দুবার, বুদ্ধ পূর্ণিমা আর মাঘী পূর্ণিমার সময় এখানে পুজো হয়। স্থানীয়রা পোখরি লেককে “পোখরি মা” হিসাবেও পূজো করে। এই লেকের কোন মাছ ধরা হয়না। মাছদের কিছু খেতে দিলে সবাই কিলবিল করে একদম পুকুরের পাড়ের কাছে চলে আসে। যারা এই লেক ভ্রমণে যায় তারা অনেকেই মাছেদের জন্য মুড়ি নিয়ে যায়। এবার পোখরি লেক থেকে ফেরার পালা। তখন চারি দিকে রোদ্দুরের আলো পড়ে ঝলমল করে উঠছে। আমরাও আস্তে ধীরে ফেরার পথ ধরলাম। এখানেই হল বিপত্তি। পথে হঠাৎই ফরেস্ট গার্ডের মুখোমুখি পড়তে হল। আমি যেহেতু জিপ এবং অথরাইজড কোনো গাইড নিয়ে আসিনি তাই ফরেস্ট গার্ডের ধমক শুনতে হয়েছিল। জিপ আর গাইড ছাড়া জঙ্গল অবশ্যই বিপদজনক। এই জঙ্গলে বাঘ না থাকলেও অন্য অনেক বুনো জন্তু আর বিশেষ করে হাতির সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের মুখোমুখি হলে প্রান যাবার সম্ভবনাও থাকে। তাই আপনারা অবশ্যই জিপ এবং গাইড নিয়ে তবেই যাবেন। কোনো এডভেঞ্চারি প্রানের থেকে বেশি বড়ো নয়। তাই সব সময় সাভধানতা অবলম্বন করা অবশ্যই প্রয়োজন।ধন্যবাদ। সকলে ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।বি: দ্র: এই ভ্রমণের সম্বন্ধে কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে https://www.facebook.com/FlyAwayMou/ এই পেজটির ইনবক্সে যোগাযোগ করতে পারেন। যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করব। আমি কোনো ট্রাভেল এজেন্ট নই। একা ঘুরতে ভালবাসি। আমার তথ্য কারো প্রয়োজনে এলে খুশি হব।