আজ মহানায়ক “উত্তমকুমারে’র” প্রয়াণদিবস।সাতের দশকে একটি অখ্যাত গ্রামের সাথে উনি আমৃত্যু জড়িয়ে ছিলেন সেটাই তুলে ধরছি। হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুর থানার “গোহালপোতা” গ্রাম।চণ্ডীমাতা ফিল্মেসের কর্ণধার স্বর্গীয় সত্যনারায়ণ খাঁয়েরসাথে মহানায়কের ১৯৭০ সালে “ধন্যি মেয়ে” ছবি দিয়ে শুরু, আর ১৯৭৯ সালে শেষ সুটিং সুখেন দাস পরিচালিত “প্রতিশোধ” ছবিতে।এর মাঝে অনেক ছবির শুটিং এই গ্রামে হয়েছে।সিনেমার কাজ ছাড়াও ২/৪ দিনের জন্য অবসর কাটাতেও উনি খাঁ’বাবুর বাড়ি আসতেন। উনি এলে দোতালার একটি ঘর, যেটি খাঁ’বাবুর পুত্রবধুথাকতেন সেটিতেই থাকতেন।বর্তমানে বাড়িটি জনশূন্য, তবে দোতলার ও তিনতালার কয়েকটি ঘর ভাড়া দেওয়া আছে।কেয়ারটেকার বলতে পড়শি এক বৃদ্ধা সকালবেলা এসে পরিস্কার করে যান।বাড়িতে মা চণ্ডীর অধিষ্ঠান, দুবেলা পুরোহিত এসে পুজো করে যান। ধন্যি মেয়ে ছবিতে যে অশ্বত্থ গাছের ডালে জয়া ভাদুড়ীদোল খাচ্ছিলেন সেটি মরে গেছে, কেবল গোড়াটা আছে। যে মাঠে ধন্যি মেয়ে ছবিতে ফুটবল ম্যাচ হয়েছিলসেই গোহালপোতা মাঠে এখনো “উত্তম কুমার” স্মৃতিশীল্ড প্রতিযোগিতা হয়। উত্তম স্মরণে অনুষ্ঠান হয়। এইবার বলি স্বর্গীয় সত্যনারায়ণ খাঁয়ের সম্পর্কে কিছু কথা, যা আমার গ্রামের বয়স্ক মানুষ ও তৎকালীন খাঁ’বাবুর ড্রাইভার ভরত দাসের মুখে শোনা।ওনাদের কলকাতার বড়বাজারে পোস্তায় পৈতৃক ব্যাবসা ছিল। এর সাথে ওনার সিনেমা জগতের সাথে যোগাযোগ ছিল। এই সুবাদে উনি চণ্ডীমাতা ফিল্মস নামে একটি প্রোডাকশন হাউস করেন। বিভিন্ন ছবির পরিবেশনা করার সূত্রে উত্তমকুমারে’র সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল। এইভাবেই 1969/70 সালে “ধন্যিমেয়ে” সিনেমার সুটিং নিজের গ্রাম “গোহালপোতা”য় করান পরিচালক “অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়” কে দিয়ে।সেই শুরু, তারপর থেকে এই গ্রামে অসংখ্য সিনেমার সুটিং হয়েছিল। খাঁ’বাবু প্রতি সপ্তাহে কলকাতা থেকে বাড়ি আসতেন। নিজের গ্রামকে এতো ভালবাসতেন যে 1960 সালে বেসিক ট্রেনিং কলেজ, 1971 সালে স্ত্রীর নামে “শোভারাণী মেমোরিয়াল” কলেজ, জগৎবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, গ্রামে পাকা রাস্তা করেছিলেন। উনি মারা যাওয়ার পর ওনার দুই ছেলে কিছুদিন পরিবেশনার কাজ চালিয়ে ছিলেন। পরে ওনার জামাই “ভবেশ কুন্ডু” চণ্ডীমা ফিল্মেসের ব্যানারে বেশ কিছু সিনেমা করেছিলেন। তারপর ওনার মৃত্যুর পর থেকেই সবকিছুই এখন কেবল স্মৃতি। আমি 2016 সালের ডিসেম্বর মাসে একদিন বালি থেকে জগৎবল্লভপুর (26 নং) বাস ধরে গিয়েছিলাম। কিন্তু বেলা এগারো’টার সময় যখন ঐ বাড়ির সামনে পৌঁছলাম, বাড়ির গেটে তালা।নিত্য পুরোহিত পূজো সেরে চলে গেছেন, আর বাড়ির কেয়ারটেকার ঠাকুমা তাঁর কাজ সেরে বাড়ি চলে গেছেন। অগত্যা বিফল মনোরথ হয়ে বাড়ির বাইরে থেকেই কিছু ছবি তুলে গ্রামে ঘোরঘুরি করছি এমন সময় ঐ ভদ্রলোকের সাথে দেখা।এরপর উনি ঐ ঠাকুমার কাছে চাবি নিয়ে এসে নীচে থেকে একেবারে তিনতালার ছাদ পর্যন্ত সব দেখালেন। সবচেয়ে মজার কথা যেটা বললেন “তখন সিনেমার সুটিং হলেই আমরা স্কুলে যেতাম না।) এরপর তৎকালীন খাঁ’বাবুর ড্রাইভার ভরত দাসের বাড়ি গিয়ে তাঁর স্মৃতিচারণ শুনলাম। সেটি আমার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা আছে। সবশেষে গেলাম সেই বিখ্যাত ফুটবল মাঠে।এই মাঠের পূর্বদিকে রয়েছে শ্মশান, যেখানে খাঁ’বাবুর পরিবারের সবার স্মৃতিফলক প্রতিষ্ঠা করা আছে। একজন মানুষ তাঁর গ্রামকে কতোটা ভালবাসলে তখনকার দিনে এই ধরনের নিজস্ব উদ্যোগে গ্রামকে জগতসভায় তুলে ধরা যায় এবং পরিবেশনার লাভের অর্থ দিয়ে কলেজ, হাসপাতাল, বেসিক ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যায়। গোহালপোতা,জগৎবল্লভপুর হাওড়া ॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥॥পথ নির্দেশ = হাওড়া- আমতা রেলপথে বড়গাছিয়া স্টেশনে নেমে তিন কিলোমিটার পথ। যদি গাড়ি/বাইকে যান তবে ডানকুনি পেরিয়ে চণ্ডীতলা, কৃষ্ণরামপুর পেরিয়ে মশাট পৌঁছাবার পর বাঁদিকের রাস্তা ধরবেন।(সোজা গেলে কিন্তু শিয়াখালা চলে যাবেন)মশাটের পর বাঁধপুর, গোপালপুর, আঁইয়া পেরিয়ে জগৎবল্লভপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাবেন।ওখান থেকে বাঁদিকের রাস্তা ধরে যাওয়ার পথেই পরবে হাসপাতাল, কলেজ। কলেজের পর একটু এগিয়ে ডাঁনদিকে গেলেই এই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে যাবেন।