।।দ্বিচারী সম্পর্ক।।ক্রিকেট সত্যিই খুব মজার।আবার খুব গভীরও।জীবনের কতো পরত যে ক্রিকেটে জড়িয়ে আছে।ধরা যাক ক্রিকেটার-দর্শক সম্পর্কের কথাই।তাকে দ্বিচারিতাও বলা যায়!যেন সকালবেলার চামেলি কিন্তু সন্ধেবেলার মল্লিকা।মাঠের বাইরে একরকম আর মাঠের মধ্যে আর একরকম।উদাহরণ ভিভ রিচার্ডস আর ইয়ান বোথাম।শচীন আর শেন ওয়ার্ন।ব্যক্তিগত জীবনে ওঁরা দারুণ বন্ধু।আর মাঠে?ইতিহাস জানে।জানে তো আমার মতো ক্রিকেটপাগল সাধারণ দর্শকও।কী ক’রে ভুলবো স্টিভের কথা?এই বাংলাতেও ওঁর সামাজিক কর্মসূচি(উদয়ন)কতো স্নেহশীল,কতো মানবিক।এই লোকটাই আবার ব্যাটে-বলে ভারতের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছেন খেলার মাঠে।মাঠের বাইরে ওঁকে শ্রদ্ধা করি ভীষণ রকম।আর ভারতের বিরুদ্ধে মাঠের খেলায় ওঁর ওপর রাগ হতো।ওয়াসিম আক্রাম ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হয়েও অদম্য আত্মবিশ্বাসে দিনের পর দিন কী অসাধারণ বল করেছেন।একথা ভাবলে ওঁকেও কুর্নিশ না ক’রে পারি না।কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে খেলা হ’লে ওঁকে ভয় লাগতো।সেই ভয় থেকেই রাগ জন্মাতো।স্টিভ-আক্রামের খেলা দেখতে চাইতাম।তবে অন্য দলের বিরুদ্ধে।ভারতের বিরুদ্ধে ওঁদের ব্যর্থতাই কামনা করতাম।এমন আরো অনেক বিদেশী ক্রিকেটারের নাম করতে পারি।যেমন অতি সুভদ্র মানুষ অথচ বল হাতে ভয়ঙ্কর কোর্টনি ওয়ালশ।অন্যান্য দেশের অনেক ক্রিকেটপ্রেমীও নিশ্চয়ই এই একই দ্বিচারী মনোভাব পোষণ করতেন শচীন সম্পর্কে।আসলে ক্রিকেটীয় দক্ষতা আর দেশকে ভালোবাসা—এ দুটো ব্যাপার এক নয়।বেশি যোগ্য যে,সে-ই তো জিতবে।এ তো একটা খেলাই।তার বেশি তো কিছু নয়।কিন্তু মাঠের ওই বাইশ জনের লড়াইটা আবেগপ্রবণ দর্শকের মনেও ঢুকে পড়ে।এমনভাবে পড়ে যে,বিপক্ষকে তখন শত্রু ব’লে মনে হয়।সেখান থেকেই সম্পর্কের এই দ্বিচারিতা জন্ম নেয়।ক্রিকেটীয় যুক্তির বাইরেও ক্রিকেট হয়ে ওঠে জীবনের অন্য একটা অস্তিত্ব।যেখানে কোহলি-রোহিত-অশ্বিন-বুমরা যেন ভারতীয় দল নয়,শুধু আমার হয়েই লড়ছেন।